বাংলাদেশের পানি সম্পদ পরিকল্পনার আরম্ভ ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (ইপিওয়াপদা)(যা বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড) ২০ বছর মেয়াদি মাষ্টার প্ল্যান তৈরির মাধ্যমে। ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালের ভয়াবহ বন্যার ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা কার্যক্রম গ্রহন করা হয়, তন্মধ্যে ক্রুগ মিশন রিপোর্ট-১৯৫৭, জেনারেল হার্ডিন রিপোর্ট-১৯৬৩, অধ্যাপক ঠিজে্সস রিপোর্ট-১৯৬৪ অন্যতম। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১৯৬৪ সালে প্রনয়ণ কৃত মাষ্টার প্ল্যানে গুরুত্ব আরোপ করা হয় বৃহৎ পরিসরে বন্যা নিয়ন্ত্রন, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প এর উপর যা ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পানি সম্পদ উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়।
আন্তর্জাতিক পূর্নগঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক (আইবিআরডি) মিশন ১৯৬৪ সালের মাষ্টার প্ল্যান পর্যালোচনা করে এবং ছোট ও মাঝারি আকারের, কম খরচে দ্রুত উৎপাদনশীল, ক্ষুদ্র সেচের প্রকল্পের উপর অগ্রাধিকারমূলক কৌশল গ্রহনের সুপারিশ করে। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন সাব-সেক্টরে ব্যাপক ভূগর্ভস্থ ও ভূপরিস্থ পানির ব্যবহার শুরু হয়, পাশাপাশি দ্রুত বৃদ্ধি পায় টিউবওয়েল ও অগভীর নলকূপের ব্যবহার । ফলশ্রুতিতে শুষ্ক মৌশুমে পানির সংকট দেখা দেয়,পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে গঙ্গার বিপুল পরিমান পানি প্রত্যাহারে ফলে পানির সংকট আরো তীব্রতর হয়। পর্যায়ক্রমে পানি সম্পদ খাতের উন্নয়নের উপর পরিবেশ, মৎস্য, বন, গৃহস্থলী ও শিল্প-কারখানায় পানির সরবরাহ , জীব-বৈচিত্রে এবং লবনাক্ততা নিয়ন্ত্রণে ভূগর্ভস্থ ও ভূপরিস্থ উভয় প্রকার পানির ব্যবহার বৃদ্ধি এ খাতের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়।
১৯৭০ সালের বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথমিশন পানি সম্পদের নিয়মাবদ্ধ/রীতিবদ্ধ মূল্যায়ন ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে জাতীয় পানি পরিকল্পনার (এনডব্লিউপি) প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তা তৈরির সুপারিশ করে । ফলে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীনে মাষ্টার প্ল্যান অরগানাইজেশন (এমপিও) গঠন করে। প্রাথমিকভাবে ১৯৮৩ পানি পরিকল্পনার (এনডব্লিউপি) প্রকল্প মাষ্টার প্ল্যান অরগানাইজেশন (এমপিও) অধীনে আরম্ভ হয় যা পানি সম্পদ উন্নয়নের জন্য একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (১৯৮৫-২০০৫) প্রত্তুত করে। এ প্রকল্প বিদ্যমান পানি সম্পদের ভূগর্ভস্থ ও ভূপরিস্থ উভয় উৎসের সমন্বিত মূল্যায়ন এবং নৌ-পরিবহন, মৎস্য ও পরিবেশেকে অর্স্তভূক্ত করে পানির চাহিদা নিরুপন করে। এপ্রকল্প বিপুল পরিমান তথ্য সংগ্রহ করে, বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা মডেলের ও বিশ্লেষণাত্মক টুলস উন্নয়ন করে পানি সেক্টরের জন্য বিভিন্ন কৌশল ও প্রোগ্রাম তৈরির সুপারিশ করে। ১৯৮৭ সালে জাতীয় পানি পরিকল্পনা (এনডব্লিউপি) সম্পন্ন হয় এবং ১৯৯১ সালে হাল নাগাদকরণ করা হয়। জাতীয় পানি পরিকল্পনা (এনডব্লিউপি) পানি সম্পদ পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিকরণ এবং দেশের দীর্ঘ মেয়াদে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব করে। যার প্রেক্ষিতে জাতীয় পানি পরিকল্পনা চলমান রাখার জন্য ১৯৯২ সালে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) গঠিত হয়।
১৯৯২ সালের জুন মাসে মাষ্টার প্ল্যান অরগানাইজেশন (এমপিও) এর নূতন নামকরণ করা হয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) এবং সংস্থাটির কার্যাবলী সম্পর্কিত আদেশনামা ১৯৯১ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। পানি সম্পদ পরিকল্পনা আইন ১৯৯২ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯৯২ সনে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওয়ারপো সৃষ্টি হয়।
১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকরী ভয়াবহ বন্যার ভয়াবহতা উপলদ্ধি করে এর স্থায়ী সমাধান খুজে বের করা জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ১৬ টি দাতা দেশ বন্যা কর্ম পরিকল্পনা (Flood Aation Plan) অর্থায়নে এগিয়ে আসে। বন্যা কর্ম পরিকল্পনা (Flood Aation Plan) কার্যক্রম সমন্বয় করার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বন্যা পরিকল্পনা সমন্বয়কারী সংস্থা (এফপিসিও) গঠিত হয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার (FAP) অধীনে বন্যা পরিকল্পনা সমন্বয়কারী সংস্থা (এফপিসিও) বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল সংগ্রহ করে যা বাংলাদেশ পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা কৌশল (বিডব্লিউএফএমএস) তৈরিতে অগ্রনী ভূমিকা রাখেএবং ১৯৯৫ সালে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা কৌশল (বিডব্লিউএফএমএস) জাতীয় পানি নীতি তৈরির সুপারিশ করে ;এর আলোকে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) দেশের জন্য সমন্বিত জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (এনডব্লিউএমপি) তৈরির করে।
বন্যা পরিকল্পনা সমন্বয়কারী সংস্থা (এফপিসিও) সাথে ১৯৯৬ সালের জানুয়ারী মাসে ওয়ারপোর একীভূত হয় এবং ১৯৯৯ সালের জানুয়ারী মাসে জাতীয় পানি নীতি (এনডব্লিউপি) প্রকাশিত হয়।পানি সেক্টরে ওয়ারপোর মতো একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পানি নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছে। জাতীয় পানি নীতি (এনডব্লিউপি) পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থাকে জাতীয় পানি সম্পদ পরিষদের নির্বাহী কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন, জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি, জাতীয় পানি সম্পদ ডাটাবেস হালনাগাদ করন, প্রকল্প পরিকল্পনাকে পর্যালোচনা ও ছাড়পত্র প্রদান করা, পরিকল্পনা কমিশনকে কারিগরী সহায়তা প্রদান, জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (এনডব্লিউএমপি) প্রায়োগিক কাজকের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা এবং পানি সম্পদের বর্ণনা, জাতীয় পানি সম্পদ পরিষদের নির্বাহী কমিটিকে প্রশাসনিক, নীতিগত ও কৌশগত পরামর্শ প্রদান করার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করেছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস